ছাগলের গলাফুলা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
গলাফুলা রোগ (লিম্ফাডেনাইটিস) সাধারণত ছাগলের একটি সংক্রামক ব্যাধি, যা ব্যাকটেরিয়া Corynebacterium pseudotuberculosis এর কারণে হয়। এই রোগটি মূলত লসিকা গ্রন্থি (লিম্ফ নোড) এবং আশপাশের টিস্যুতে ফোলাভাব সৃষ্টি করে। নিচে গলাফুলা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
লক্ষণসমূহ:
১. গলার আশপাশে ফোলাভাব:
ছাগলের গলা, কান, বা চোয়ালের নিচে লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে।
ফোলা জায়গা শক্ত ও চামড়া টানটান হয়।
২. পুঁজ জমা হওয়া:
ফোলা অংশে পুঁজ জমে যা পরে ফুটে বের হয়ে আসতে পারে।
পুঁজ সাধারণত পুরু, সাদা বা হলুদাভ হয়ে থাকে।
৩. ক্ষত সৃষ্টি হওয়া:
পুঁজ বের হওয়ার পর সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ার আগেই রোগটি পুনরায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৪. দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা:
আক্রান্ত ছাগল দুর্বল হয়ে পড়ে।
খাদ্যে অনীহা দেখা যায়।
৫. শ্বাসকষ্ট:
ফোলা অংশ যদি শ্বাসনালীতে চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
৬. ওজন কমে যাওয়া:
ছাগল ক্রমাগত দুর্বল হয়ে ওজন হারায়।
৭. জ্বর ও অবসন্নতা:
রোগের তীব্র অবস্থায় জ্বর হতে পারে।
ছাগল অবসন্ন ও স্থবির হয়ে থাকে।
৮. মৃত্যুর ঝুঁকি:
যদি রোগ নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা:
১. চিকিৎসা পদ্ধতি:
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার:
পশুচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পেনিসিলিন বা টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়।
অ্যান্টিসেপটিক প্রয়োগ:
ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার জন্য আয়োডিন বা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার করা যেতে পারে।
পুঁজ অপসারণ:
ফোলা অংশ কেটে পুঁজ বের করে দিতে হয়।
এই কাজ অবশ্যই জীবাণুমুক্ত পদ্ধতিতে করতে হবে।
২. টিকা প্রদান:
ছাগলকে গলাফুলা রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত টিকা দেওয়া উচিত।
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাকসিন ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
৩. পুষ্টি নিশ্চিত করা:
রোগাক্রান্ত ছাগলকে সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া প্রয়োজন।
যথেষ্ট পরিমাণে পানি ও সুষম খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ:
আক্রান্ত ছাগলকে অন্যান্য ছাগল থেকে আলাদা রাখা।
পশুর খোঁয়াড় ও আশপাশের পরিবেশ নিয়মিত পরিষ্কার করা।
৫. ক্ষতস্থানের যত্ন:
ক্ষতস্থান জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য প্রতিদিন পরিষ্কার করা।
ক্ষত শুকানোর জন্য অ্যান্টিসেপটিক মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. পশুচিকিৎসকের পরামর্শ:
রোগ শনাক্ত হলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
খামার ও আশপাশের এলাকা জীবাণুমুক্ত রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার করা।
শুকনো ও পরিষ্কার জায়গায় ছাগল রাখার ব্যবস্থা করা।
২. আক্রান্ত ছাগল আলাদা রাখা:
রোগ ছড়িয়ে পড়া রোধে আক্রান্ত ছাগলকে আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া।
৩. টিকা প্রদান:
সময়মতো ছাগলকে টিকা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা।
৪. খাওয়ার জায়গার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা:
ছাগলের খাবার ও পানির পাত্র জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
৫. যেকোনো ক্ষত দ্রুত চিকিৎসা করা:
৬. নতুন পশু যোগ করার আগে পরীক্ষা:
খামারে নতুন ছাগল যোগ করার আগে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।
গলাফুলা রোগ থেকে ছাগলকে রক্ষা করাজন্য রোগ প্রতিরোধে সতর্কতা ও দ্রুত চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
Comments
Post a Comment