মুরগির ফাউল পক্স রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ফাউল পক্স (Fowl Pox) একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মুরগি এবং অন্যান্য পোলট্রি পাখির মধ্যে অত্যন্ত সংক্রামক। এটি Avipoxvirus দ্বারা সৃষ্ট এবং সাধারণত দুই প্রকারে দেখা যায়:

ফাউল পক্স 

. ড্রাই ফর্ম (Dry Form): চামড়ার ওপর ক্ষত সৃষ্টি করে।

. ওয়েট ফর্ম (Wet Form): মুখগহ্বর ও শ্বাসতন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি করে।


ফাউল পক্স রোগের লক্ষণসমূহ:


১. ড্রাই ফর্মের লক্ষণ:

মুরগির মুখমণ্ডল, ঠোঁট, চোখের চারপাশ, এবং ঝুটিতে ছোট ছোট বাদামী বা কালচে ক্ষত।

ক্ষতগুলো ধীরে ধীরে বড় হয় এবং শক্ত হয়ে যায়।

ক্ষত শুকানোর সময় স্ক্যাব পড়ে যায়।

আক্রান্ত মুরগি খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয় এবং ওজন কমে যায়।


২. ওয়েট ফর্মের লক্ষণ:

মুখগহ্বর, জিহ্বা, ঠোঁটের ভিতরের অংশ, এবং শ্বাসতন্ত্রে পুঁজের মতো সাদা দাগ বা ক্ষত।

শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, এবং শ্বাসকষ্টের শব্দ শোনা যায়।

খাবার ও পানি গ্রহণে অসুবিধা হয়।

মুরগির মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।


৩. অন্যান্য লক্ষণ:

অলসতা ও কম সক্রিয়তা।

ডিম পাড়ার হার কমে যাওয়া।

চোখ ও নাক দিয়ে সর্দি বা তরল নির্গত হওয়া।

মুরগির ঝুঁটি ও থুতনি ফ্যাকাসে বা কালচে হয়ে যাওয়া।


আরো জানুনঃ>> মুরগির কলেরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার


ফাউল পক্সের সংক্রমণের কারণ:

মশা বা কীটপতঙ্গ: মশা এই রোগের প্রধান বাহক।

সংক্রামিত পাখি: আক্রান্ত মুরগি থেকে ভাইরাস ছড়ায়।

পরিবেশ: দূষিত খাবার-পানি বা অপরিষ্কার থাকার পরিবেশ।

আঘাত বা কাটাছেড়া: মুরগির শরীরে ছোটখাটো ক্ষত বা কাটা অংশে ভাইরাস প্রবেশ করে।


প্রতিরোধ ও প্রতিকার:

১. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:


টিকাদান:

ফাউল পক্সের জন্য বিশেষ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

বাচ্চা মুরগির ৬-৮ সপ্তাহ বয়সে টিকা দেওয়া উত্তম।

ভ্যাকসিন একবার দেওয়া হলে সাধারণত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর হয়।


মশা নিয়ন্ত্রণ:

মশার উপদ্রব কমানোর জন্য পোলট্রি শেডে কীটনাশক ব্যবহার করা।

শেডে মশার জাল বা পর্দা লাগানো।


পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:

পোলট্রি ফার্ম নিয়মিত পরিষ্কার করা।

খাবার-পানির পাত্র জীবাণুমুক্ত রাখা।

পোলট্রি শেডে বর্জ্য ও নোংরা অপসারণ করা।


পৃথকীকরণ:

আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে রাখা।

নতুন মুরগিকে শেডে আনার আগে তাদের পরীক্ষা করা।


২. প্রাথমিক চিকিৎসা:

ক্ষতের যত্ন:

ড্রাই ফর্মের ক্ষতগুলো জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা।

পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশ্রিত পানি বা অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ ব্যবহার করা।


ওষুধ প্রয়োগ:

শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য প্রয়োজন হলে ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার।

ভিটামিন এ এবং সি সম্পূরক দেওয়া, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।


ওয়েট ফর্মের চিকিৎসা:

মুখগহ্বরের ক্ষত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা।

পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ।


৩. খাদ্য ও পুষ্টি:

রোগাক্রান্ত মুরগিকে সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া।

পানি যাতে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করা।


৪. রোগমুক্তির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা:

শেডে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।

আক্রান্ত মুরগি মারা গেলে সঠিকভাবে পুঁতে ফেলা।


ফলাফল ও পুনরুদ্ধার:

সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করলে মুরগি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে, ফাউল পক্সের টিকা দেওয়া থাকলে রোগটি সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।


এই প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনুসরণ করলে পোলট্রি খামার স্বাস্থ্যকর থাকবে এবং উৎপাদনশীলতাও বাড়বে।


Comments

Popular posts from this blog

ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি ও প্রাথমিক চিকিৎসা

হাঁস কত দিনে ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়া হাঁসের সঠিক পরিচর্যা

ফাউমি মুরগি ডিম পাড়ার সময়কাল এবং অধিক ডিম উৎপাদনের পদ্ধতি